top of page

স্কুল অব এথেন্স (প্রবন্ধ)

লেখক : শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়

প্রকাশক : ভিরাসত আর্ট পাবলিকেশন


দৈর্ঘ্য : ২২০ মিমি

প্রস্থ : ১৪২ মিমি

স্পাইন : ১৫ মিমি

পৃষ্ঠা : ১৬২


প্রকাশকের কথা


দেওয়ালের পিঠে চুনের আস্তর লাগিয়ে তার গায়ে যে-ছবি আঁকা হয় তাকে বলে ফ্রেস্কো। আর ইতালির ‘নবজাগরণ’-এর সময়কার তিন বিখ্যাত ত্রয়ীদের— মাইকেল এঞ্জেলো, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এবং রাফায়েল উর্বিনো — একজন রাফায়েল পোপ-নগরী ভ্যাটিকানে “স্কুল অফ এথেন্স” নামের যে-ফ্রেস্কোটি এঁকে গেছেন, তা এই পাঁচ-শো বছরের পরেও যুগপৎ বিস্ময় ও রহস্য— দুটোই বজায় রেখেছে। আমরা জানি যে সেই ‘রেনেসাঁস’ লগ্নে ইতালির চিন্তাবিদরা বর্তমানের পাপবোধ, হানাহানি ও অনৈতিকতার বিকল্পে এক প্রাচীন নৈতিকতার আশ্রয় নিতে চেয়েছিলেন। তাই প্রাচীন গ্রিস-এর দার্শনিক চেতনাই প্রাথমিকভাবে এর উপজীব্য ছিল। যদিও এই ফিরে পাওয়ার ব্যাপারটি খুব সহজভাবে সম্পাদনা করা যায়নি। সেইসব চিন্তাবিদগণের মধ্যে বৌদ্ধিক বিবাদও ছিল, তাঁদের মানবতার তত্ত্ব ক্রমে ধর্মীয় মানবতায় রূপান্তরিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে বলা যায় ইতালির রেনেসাঁ আর যেভাবেই বর্ণিত হোক না কেন, দৃশ্যকলায় যেসব মহান সৃষ্টি এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হয়ে উঠেছিল তা সত্যি-ই বিস্ময়কর! আর রাফায়েলকৃত এই ভিত্তিচিত্রটি আজও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, কারণ এতে অঙ্কিত আটান্ন জন গ্রীক দার্শনিক ঠিক কারা তা নিয়ে বিতর্ক আজও চলেছে। এমনকি নানা সামাজিক মাধ্যমে সেইসব চরিত্রের মধ্যে কার থাকা উচিৎ ছিল বা ছিল না এমন প্রসঙ্গও আছে। রাফায়েল এই ছবি আঁকার আগে সেইসব দার্শনিকদের ছবি দেখেছিলেন, সেই সম্ভাবনা নেহাৎই কম। তাঁদের কারোর কারোর অর্ধ এবং পূর্ণাবয়ব মূর্তি কিছু আবিষ্কৃত হয়, কিন্তু তার অনেকগুলোই রাফায়েলের মৃত্যুর পরে। তাই তাঁকে কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়েছিল। কারোর কারোর মুখ এঁকেছিলেন সমসাময়িক শিল্পীদের মুখের আদলে। ছবির নামকরণও করেছিলেন ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ। সুতরাং, এই ছবি যুগে যুগে চূড়ান্ত উৎকর্ষ প্রকাশের সঙ্গে প্রবল তর্কের ইন্ধনও নিয়ে এসেছে। এ-নিয়ে বই লেখা যে-দুরূহ কর্ম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এই বই-এর লেখক শক্তিসাধন যে এক অসাধ্য সাধন করেছেন তা বলা বাহুল্য। তবে এই কৃতি অধ্যবসায়ী গবেষক কেবল দার্শনিক চিহ্নিত করেই ক্ষান্ত থাকেননি বরং শিল্পীর তিরোধানের পাঁচ-শো বছর পূর্তিতে তাঁর এই শিল্পকর্মকে সামনে রেখে ছত্রে ছত্রে তুলে এনেছেন সেই ইতালীয় রেনেসাঁসের বিস্তারিত তথ্য ও তত্ত্ব। আর এটাই এই গ্রন্থের সার্থকতা। প্রকাশক হিসেবে লেখক এবং বই নির্মাণে যুক্ত যাবতীয় কৃতি মানুষদের ধন্যবাদ জানান ছাড়া আমার আর এক্ষেত্রে কিছুই করার নেই। তবে বই-এর মলাটের দু-প্রান্তে গ্রিক ও ইতালীয় ভাষায় লেখক ও বই সম্পর্কে যে-সামান্য উল্লেখ রয়েছে তার রচয়িতারা যথাক্রমে— পুস্তক পরিচিতি বিষয়ে ইতালীয় বয়ান তৈরিতে সাহায্য করেছেন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষিকা Soraya Cipolla ও ইতালির সালের্নো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষিকা ইসরাক জাহান পাপিয়া। আর পুস্তক পরিচিতির গ্রিক বয়ান তৈরি করেছেন কবি উজ্জ্বল ঘোষ ও গ্রিসের এক পণ্ডিত Sakis Kavakopulos। তাঁদের প্রতি আমার বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। পরিশেষে এটাও বলার ছিল এই বইটি যদি মেধাচর্চায় নতুন কোনও তর্কের উদ্ভব ঘটায়, একজন প্রকাশক হিসেবে তাকেও আমি স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।

 

— গণেশ প্রতাপ সিং

 

গ্রন্থ প্রসঙ্গ


ইতালির বিশ্ববিশ্রুত রেনেসাঁস চিত্রী রাফায়েলের মৃত্যুর ৫০০ বছর অতিক্রান্ত ৷

ইতালীয় রেনেসাঁসের বিশ্রুত শিল্পী রাফায়েল পোপের লাইব্রেরি অলঙ্কৃত করার বরাত পেয়েছিলেন। রোমে তখন চলছে ‘হাই রেনেসাঁস’। তিনি একটি দেওয়ালে এঁকে ফেললেন গ্রিক পণ্ডিতদের তর্ক-সংকুল ছবি। সেই ছবিই ‘দি স্কুল অব এথেন্স’। রেনেসাঁস হচ্ছে ‘রিভাইভ্যাল অব ক্ল্যাসিকাল লার্নিং'। সে-সময় প্রাচীন বিদ্যার পুনরুদ্ধার প্রকল্পে নেমেছিলেন ইতালির বিদ্বানরা। এদের বলা হয় হিউম্যানিস্ট। রাফায়েল আর্টিস্ট। তিনি আর বিদ্যা পুনরুদ্ধার করবেন কিভাবে? বিদ্বানদেরই তুলে নিয়ে এলেন সশরীরে। বিশল্যকরণী নয়, গন্ধমাদন। নয় নয় করে সাতান্ন / আটান্ন জনের ছবি। কারা তারা? কে কোন বিদ্যার কর্ষণ করেছিলেন? এ সব তো আর ছবিতে আঁকা যায় না। একটাই পরিচয় তাদের। তারা এথেন্সের বিদ্বান। অনুসন্ধানে নেমে দেখা গেল প্রায় হাজার বছর ধরে প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন শহরে এমনকি গ্রিসের সীমানা ছাড়িয়ে ভূমধ্যসাগরের তীরে তীরে বিভিন্ন উপনিবিষ্ট শহরে নানা ঘরানার যেসব দার্শনিকরা জ্ঞানচর্চা করে গেছেন তাদের একটি ঘনীভূত সমাবেশ রয়েছে এই ছবিতে। কারও কোনও নাম নেই, পরিচয় নেই, টিকাটিপ্পনী কিচ্ছু নেই। শিল্পীর সে-দায় ছিল না; দেওয়াল জোড়া অর্ধবৃত্তাকার এই মহাকাব্যিক ছবির একটাই সংকেত— ‘দি স্কুল অব এথেন্স’।

ছবিটি নিয়ে বহু পণ্ডিত মাথা ঘামিয়েছেন। ৫৮ জনের মধ্যে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করা গেছে মাত্র ২০ জনকে। বাকি ৬ জন ইনিও হতে পারেন উনিও হতে পারেন এইভাবে অর্ধচিহ্নিত। বাকি ১৭/১৮ জনের নাম বিভিন্ন জন উচ্চারণ করেছেন, কিন্তু কে কোন জন তার নির্ণয় দিতে পারেননি। ২০ + ৬ + ১৮ = ৪৪ জন বাদ দিলে বাকি ১৪/১৫ জন দার্শনিক কারা সাধারণভাবে তার কোনও নিশ্চিত হদিশ নেই। আমরা নিশ্চিত, অর্ধনিশ্চিত ও সম্ভাব্য দার্শনিকদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও তাদের জ্ঞানচর্চার চুম্বক তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। এখানে প্লাতো, আরিস্ততল, সক্রাতেসের মতো বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিকদের কথাও যেমন আছে তেমনি নামগোত্রহীন বহু অপরিচিত দার্শনিকের কথাও এসেছে।

বলে নেওয়া ভালো এ-বই দর্শনবিদদের জন্য নয়, দর্শন বিষয়ে আগ্রহী সাধারণ পাঠকদের কথা ভেবে লেখা। এই বইটি পড়লে একটা ধারণা হবে দু-আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিসে জ্ঞানচর্চা কতটা তুঙ্গে উঠেছিল, কতটাই-বা ব্যাপ্ত হয়েছিল। কতরকম তার বৈচিত্র্য। জ্ঞানের অপার ক্ষুধা তাদের তাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল সব দিকে। কোনও কিছু তারা ধ্রুবজ্ঞানে মেনে নেয়নি। বৈদগ্ধ্যপূর্ণ তর্কের অসিঝলক সবখানে দেখা যেত। বোক্কাচিত্ত বলেছিলেন, ‘লার্নিং মেকস এ ম্যান হিউম্যান’। জ্ঞানই মানুষকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। রেনেসাঁসের ইতালি ধর্মানুশাসিত আবদ্ধতার জীবন থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিল। আর তা করতে গিয়ে তারা ফিরে তাকিয়েছিল প্রাচীন গ্রিস ও রোমান বিশ্বের দিকে। গ্রিসের জ্ঞান-বিশ্বের দিকে কী নিবিড় চোখ নিয়ে সে ফিরে তাকিয়েছিল তা টের পাওয়া যায় রাফায়েলের এই ছবিটির দিকে তাকালে। একটি ছবির মধ্যে দিয়ে আমরা দেখে নিতে চেয়েছি গ্রিসের বিদ্যাচর্চার হাজার বছরের আলোক-বিশ্বটি। তর্কসঙ্কুল, মুক্ত জ্ঞানের প্রতি যে-শ্রদ্ধা এই ছবিতে সংহত হয়ে আছে তা তুলে ধরাই এ-গ্রন্থের উদ্দেশ্য। রেনেসাঁস মানব সভ্যতাকে আধুনিক করতে চেয়েছিল। আধুনিকতার প্রাচীনতম মৌলিক উপাদান হচ্ছে জ্ঞান। রাফায়েল জ্ঞানীদের এই ছবিটি এঁকে সেই বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন।

 

লেখক পরিচিতি :

ড. শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়

জন্ম : ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫১

গ্রাম : জুতিহাটি, কেওটাড়া, বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ

পড়াশুনা : বর্ধমান রাজ কলেজ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, পিএইচডি ডিগ্রি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

অধ্যাপনা : বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ,

জঙ্গীপুর কলেজ ও খিদিরপুর কলেজ

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রাক্তন সম্পাদক (২০১৩-২০১৬)

গবেষণার বিষয় : রেনেসাঁস ও হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও

স্মারক বক্তৃতা : উইলিয়াম কেরী স্মারক বক্তৃতা (২০০০), সুশোভনচন্দ্র স্মারক বক্তৃতা (২০১৭)

গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা : ২৫টির বেশি গ্রন্থ 

প্রবন্ধ : দ্বিশতাধিক প্রবন্ধের লেখক

মানবতাবাদী, আন্তর্জাতিকতাবাদী ও বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী

コメント


bottom of page