
লেখক: শান্তনু দে
প্রকাশক: পলান্ন প্রকাশনী
হার্ডকভার, ২৩৪ পৃষ্ঠা (১৪ সেমি X ২১.৫ সেমি), ২৯৫/- টাকা
আজ থেকে দু'বছরের সামান্য কিছু আগে খোয়াবনামা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল অনির্বাণ ঘোষ-এর লেখা 'হায়রোগ্লিফের দেশে'। মিশর, তার ইতিহাস ও কিংবদন্তি, জীবনযাপন ও প্রভাব— এগুলো বাংলায় প্রায় থ্রিলারের মতো আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে পরিবেশন করা হয়েছিল সেই বইটিতে। তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল বইটি। তারই পাশাপাশি অন্য একটা প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছিল।
এমন ভাবে গল্পের ছলে অন্যান্য দেশের ইতিহাস ও কিংবদন্তিকে আমাদের সামনে, আমাদের ভাষায় কবে তুলে ধরা হবে?
সুধাংশুরঞ্জন ঘোষ মহাশয় আজ থেকে ষাট বছরেরও বেশি আগে 'গ্রিকপুরাণ কথা' নামে যে অনূদিত গ্রন্থটি লিখেছিলেন, বা অতি সম্প্রতি অরণ্যমন থেকে দেবলীনা সাহা'র লেখায় 'গ্রিস: ধর্ম বিশ্বাস দেবদেবী' নামে যে বইটি প্রকাশিত হয়েছে, তাদের একটা বড়ো সীমাবদ্ধতা আছে। এই বইগুলো ইনডেক্স বা চরিত্রমালার মতো করে একের পর এক চরিত্রের কথা বলেছে। বইগুলোকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু গল্পের মতো করে পড়া যায় না।
ঠিক সেই শূন্যতায় আত্মপ্রকাশ করেছে এই বইটি।
এতে শান্তনু টানা একটা গল্প বলে গেছেন। ষড়রিপু আর মহত্বের টানাপোড়েনে কীভাবে তথাকথিত দেবলোক থেকেই সৃষ্টি হল ভালো-মন্দ মেশানো এই পৃথিবী— সেই গল্পটা বলেছেন তিনি৷ তার জন্য তিনি মূলত ব্যবহার করেছেন হেসিওড-এর থিওগোনি। এর ফলে গ্রিক মিথলজি বলতে হ্যামিল্টন, গ্রিভস বা ফ্রাই-এর যে বইগুলো আমরা অনেকেই পড়ি, তার বেশ কিছু আখ্যান বাদ পড়েছে (হয়তো পরে আসবে বলে)। কিন্তু যেক'টি কাহিনি আমরা পেয়েছি, অন্তত সেগুলো এসেছে পরস্পর সংযুক্ত হয়ে।
পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে, যেন কেউ আমাদের গল্পই শুনিয়ে চলেছে। কথায় কথা বাড়ছে। দেবদেবীদের যে রূপগুলো আমাদের চোখে ধরা পড়ছে তার কিছুটা চেনা আর কিছুটা অচেনা। তারই সঙ্গে মিশে যাচ্ছে আমাদের পুরাণভাবনা আর আধুনিক হলিউডি দৃশ্যকল্প। সব মিলিয়ে গ্রিক মিথলজি আমাদের কাছে আসছে পাঠ্যবই নয়, বরং গল্পের বই হয়ে!
এটা সম্ভব হয়েছে দুটো কারণে।
প্রথমত, শান্তনু গ্রিক ভাষা জানেন এবং ওই সংস্কৃতিটিকে বোঝেন। ফলে অন্য অনেকের মতো ইংরেজি অনুবাদ পড়ে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতার মধ্যে তিনি আটকে পড়েননি। তাই তাঁর গল্পগুলো হয়েছে সপ্রাণ ও দেদীপ্যমান।
দ্বিতীয়ত, শান্তনু'র গদ্যের হাতটি ভারি চমৎকার। তাঁর লেখায় চরিত্রগুলো স্রেফ দ্বিমাত্রিক কথক হয়ে আসেনি। বরং তাদের যেন চোখের সামনেই দেখতে পেয়েছি আমরা।
'হায়রোগ্লিফের দেশে'-র উত্তরসূরি হিসেবে এই বইয়ের দুটি বিশেষত্ব আছে। তারা হল~
১) গ্রিক বর্ণমালার সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে (বা ঝালিয়ে) দিয়েছে বইটি। উৎসাহিত হয়ে আমরাও ফেলুদা'র মতো করে গ্রিক হরফে আর ইংরেজি ভাষায় ডায়রি লেখা শুরু করতেই পারি এবার।
২) এই বইয়ের শেষেও একটা রহস্য আছে, যেটা পাঠককে বলে, "পিকচার অভি বাকি হ্যায়, মেরে দোস্ত।"
সেই বাকিটা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
বইটির ছাপা, বাঁধাই, অলংকরণ খুব ভালো৷ হাতে-গোনা ক'টি ছাড়া টাইপো বিশেষ দেখিনি। বিষয়টি যে প্রকাশকের কাছে যথোপযুক্ত গুরুত্ব পেয়েছে, তা দেখে ভালো লাগল।
যদি গ্রিক মিথলজি নিয়ে আগ্রহী হন, তাহলে এই বইটি আপনার পড়া উচিত বলেই আমি মনে করি।
অলমিতি।